পথশিশু, লেখা : অবুঝ ছেলে রুওয়াইম !
পথশিশু, লেখা
: অবুঝ ছেলে রুওয়াইম !
>>মেয়ে : আংকেল আংকেল!
(কেউ কি আমাকে ডাকছে?
না অন্য কাউকে ডাকছে।
আবার সেই একই ডাক। না ফিরে পারলাম না। চেয়ে দেখি ছোট্ট ফুট ফুটে একটি মেয়ে। বয়স বড়জোর সাত হবে। হাতে কিছু লাভ কেন্ডি।) ওর দিকে ঝুকে বললাম,
>>আমি : মামনি, আমাকে ডাকছ?
>>মেয়ে : হুম।
>>আমি : কিছু বলবে?
>>মেয়ে : আংকেল, একটা কেন্ডি কিনেন না!
>>আমি : অবশ্যই! কেন কিনবো না!
বলতেই মেয়েটি আমার হাতে দুটি লাভ কেন্ডি দিল।
>>আমি : (দাম জেনেও) মামনি, তোমার লাভ কেন্ডি কত?
>>মেয়ে : দুই টাকা।
>>আমি : তুমি এগুলো কেন বেচ?
>>মেয়ে : এগুলো বেচে দু মুঠো খাবার জোগাই।
>>আমি : তোমার বাবা মা নেই?
>>মেয়ে : বাবা মারা গেছে! মাকে খুজে পাচ্ছি না!
>>আমি : তোমার ভাই বোন নেই?
>>মেয়ে : ভাইয়া আছে। ভাইয়াও কেন্ডি বেচে।
>>আমি : সে কোথায়?
>>মেয়ে : ঐ খানে আছে!
ওর ভায়ের থেকে যা শুনলাম। তাতেই হেড।
বাবা ক্যান্সারের কারণে দুমাস আগে ইহকাল ত্যাগ করেছেন। দুদিন পরের কথা। সকালে মা আমাদের দুজনকে ঘুম পাড়িয়ে উধাও হয়ে গেলন। এরপর তাসফিয়াকে (মেয়েটির নাম তাসফিয়া। ছেলেটির নাম তাসনিম।) নিয়ে ঐ ঘরেই আমি একদিন মায়ের অপেক্ষায় থাকি। কথন মা আসবেন? আর আমাদের খাবার জোগাবেন?
কিন্তু মায়ের কোন খবর পেলাম না। খিদায় তাসফিয়া কাঁদতে ছিল! বাড়ি ওয়াল মা উধাও হয়ে যাওয়ার খবর শুনে বড়ই নিষ্ঠুরতার সাথে আমাদেরকে ঘর ছাড়া করেন। তখন আমার আর কিছুই করার উপায় ছিল না। তাই চিন্তা করলাম মাটির ব্যাংকটা ভাঙ্গব। আর সে টাকা দিয়েই কিছু আহার জোগাবো। আলমারির উপর থেকে ব্যাংক নামাতে গিয়ে দেখি ব্যাংক আছে, কিন্তু একটা টাকাও নেই। এরপর বাড়িওয়ালার মেয়ে দোলা আপু , আমাদেরকে পাঁচশত টাকা দেন। এই টাকা দিয়ে কেন্ডি বেচে কোন মতে দিন কাল চলছে! আংকেল, আমি অনেকের কাছে এগুলো বলেছি। বাট তারা কোন ভ্রুক্ষেপ তো করলই না। বরং তাড়িয়ে দিয়েছে। আপনি আমাদের কিছু একটা ব্যাবস্থা করে দিন!
তাসনিম কথাগুলো খুব কষ্ট নিয়ে বলছিল। দু চোওয়াল বেয়ে চোখের পানি ঝরছে। তাসনিমের কান্না দেখে ছোট্ট মামনিটি বলতে লাগল, ভাইয়া কাঁদ কেন? তুমি কাঁদলে আমারও কান্না পায়।
(ওদেরকে হলে এনে আমরা একটা ব্যবস্থা করলাম। এখন ওরা ভালোই আছে।)
<><>~<><>
মানুষ কত কষ্টে আছে! রাস্তা ঘাটে পায়চারি করলে এর কিছুটা চোখে পড়ে। এমন পথশিশু আমাদের চলাচল পথে প্রায় দেখা যায়। ওরা শুধু হাত জোর করে একটা কেন্ডি নিতে বলে। বা একটা টাকার আবদার করে। ওরা কিন্তু আমাদের কাছে লাখ টাকা চায় না। মাত্র দু এক টাকা। অথচ আমরা এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই। একবার দয়াও হয় না ওদের প্রতি। বাস্তবে ওরা যদি আমাদের আপন কেও হত, তখন আপনি কী ফিল করতেন? তাদের প্রতি আপনার কী কোন দয়া হত না? অবশ্যই হত। তাই ওদের জন্য কিছু না করতে পারলেও ওদের দেওয়া কেন্ডিটা ফিরিয়ে দিবেন না। আপনাদের এক টাকার ফলে ওদের এক মুঠো ভাত জুটবে।
Source: Radiomunnadotcom